বাবা দিন মজুর, ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন স্কুল টপার অসিতের

সৌমেন দাস; লাভপুর, মাটির খবর : বাবা দিন মজুর, ছেলে এবছর মাধ্যমিকে স্কুলে প্রথম, ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে। কিন্তু অভাব যেন চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পরিবারে। সম্প্রতি রাজ্যে প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফলাফল। সেই পরীক্ষাতেই ৬৫৮ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম হয়েছে কুরুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী তথা ঠিবা ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা অসিত মণ্ডল। ভবিষ্যতে তার ইচ্ছে নিজেকে ভালো ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থায় যেন তার সেই ইচ্ছের সামনে প্রশ্ন চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়েছে! 


অসিতের এই তাক লাগানো সাফল্যের পরে সে জানায় বাড়িতে তাঁর বাবা, মা, ও দাদাকে নিয়ে চারজন সদস্য। বাবা সুজিত মণ্ডল দিন মজুরের কাজ করেন, মা সঞ্চিতা মণ্ডল গৃহবধূ ও দাদা কলেজ পড়ুয়া। তাদের সংসারের মূল উপার্জন তাঁর বাবার দিন মজুরির অর্থ। ফলে ছোটো থেকেই অভাব ও দারিদ্রতার মধ্যে দিয়েই বড়ো হয়ে ওঠা। ফলে স্কুলের পড়াশুনার পাশাপাশি দুটো টিউশনই ছিল তার মূল সম্বল। তার সঙ্গে  সারাদিনে বড়জোর সাত থেকে আট ঘণ্টা বাড়িতে পড়াশুনা। বাকি সময় খেলা ধুলা সহ বাড়ির অন্যান্য কাজও করতে হয়। যদিও তার পড়াশুনার ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকদের বিশেষত পরিমল চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় জয়সওয়াল, মানোয়ার আলী মল্লিক ও স্বদেশ মণ্ডলদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অসিত জানায়, স্কুলে বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা তাঁকে বিভিন্ন বই, খাতা সহ অন্যান্য পড়াশুনার সরঞ্জাম যেমন দিয়েছেন তেমন লকডাউন চলা কালীন পড়াশুনা সংক্রান্ত বিভিন্ন সহযোগিতাও তাঁদের থেকে পেয়েছে সে।

অসিতের বাবা, সুজিত বাবুও ছেলের সাফল্যে যথেষ্ঠ খুশি। তিনি জানান, তাঁর দুই ছেলের মধ্যে অসিত ছোটো।ও পড়াশুনাতে ছোট থেকেই ভালো। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে হয়তো সব সময় ভালো টিউশন দেওয়া হয়ে ওঠেনি, ফলে ও নিজে যতটুকু পেরেছে পড়েছে নাহলে স্কুলের মাষ্টারমশাইদের থেকে জেনে নিয়েছে। তবে ও এখন যে রেজাল্ট করেছে সেটা  আশাতীত।
যদিও ছেলের ইচ্ছের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে সুজিত বাবু কিছুটা মন খারাপের সুরেই বলেন, অভাবের সংসার। ডাক্তারি পড়তে গেলেতো বিশাল টাকার ব্যাপার, সেই ক্ষমতা কই?
অসিতের মা সঞ্চিতা দেবী অবশ্য জানান, ছেলের এই রেজাল্টে তিনি খুশি। ছোটো থেকেই ছেলে পড়াশুনায় আগ্রহী। ও বাড়ির কাজ কর্ম সামলে, খেলা ধুলা করেও নিজের সময় মতো নিজের পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছে। ওকে কোনোদিন পড়তে বসতে, বা টিউশনি যাওয়ার জন্য আলাদা করে বলতে হয়নি। তবে ও ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। চেষ্টা করবো ওকে ডাক্তারি পড়ানোর। জানিনা আমরা নিজেরা কতটা কী করতে পারবো। যদি সরকারি ভাবে বা অন্য কোনো ভাবে কোনো সাহায্য আমরা পাই তাহলে হয়তো আমরা ওর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। 
অসিতের এই সাফল্যের পরে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ ঘোষ জানান, অসিত একজন উজ্জ্বল ছাত্র। ফলে তার যে ঐকান্তিক ইচ্ছা সেটা যাতে পূরণ হয়, সেই বিষয়টা সুনিশ্চিত করতে তিনি এবং তাঁর স্কুলের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা সব সময় অসিতের পাশে আছে। সেটা আর্থিক দিক থেকে হোক বা যেকোনো দিক থেকে।আর তাই সকলের শুভেচ্ছা ও সহযোগিতা যে  অসিতকে  তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে তা নিশ্চিত।

মন্তব্যসমূহ