'উচ্ছন্নে যাওয়া প্রজন্ম' এর তকমা ঘুচিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নতুন ইতিহাস লিখছে ভাগ্যশ্রী, তানিষ্কা, অরিন্দমরা।
সৌমেন দাস; মাটির খবর: "বন্ধু, হাল ছেড়ো না, দেখা হবে মহামারীর ওপারে...!"
এই মন্ত্রের মধ্যে দিয়েই করোনা মহামারী থেকে শুরু করে সদ্য ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াশে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর বুকে যুব সমাজের নামে এক নতুন ইতিহাস লিখছে রিলিফ উইংসের ভাগ্যশ্রী, শাশ্বত, অরিন্দম, সাগ্নিক, কস্তুরী, জয়, মোনালিসারা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলার বুকে করোনা মহামারী যেন এক বিষাক্ত ঘায়ের রূপ নিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে রোজ শ'য়ে শ'য়ে লোক মারা যাচ্ছেন পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন ও হাসপাতালের বেডের অভাবে তখন এই উনিশ কুড়ি বছরের যুবক যুবতীরা রাত দিন এক করে দিচ্ছে আক্রান্ত মানুষগুলোক সু চিকিৎসা পাইয়ে দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্য একটাই, কোনো মানুষকে যেন স্বজন হারা হতে না হয়। রিলিফ উইংসের এক সদস্যা, ভাগ্যশ্রী সামন্ত জানান, 'রিলিফ উইংস' মূলত হোয়াটস্ অ্যাপ গ্রুপ। তাদের কলেজের কয়েকজন দাদা ও তার কিছু বন্ধু বান্ধবী মিলে চলতি বছরের ২৭শে এপ্রিল এই গ্রুপের কাজ শুরু হয় একত্রিত হয়ে। তার আগে অবশ্য তারা আলাদা আলাদাভাবে যতটুকু সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তবে বর্তমানে তাদের এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে টিভির পর্দায় বা খবরের কাগজে রোজই তারা দেখছে কিভাবে মানুষ অক্সিজেনের অভাবে বা হাসপাতালে বেডের অভাবে মারা যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার হয়রানির স্বীকার হচ্ছে অক্সিজেন বা হাসপাতালের বেড খুঁজতে গিয়ে। আর এই ছবি গুলোই কোথাও যেন গিয়ে আঘাত করে তাদের মনকে, যার ফলে তারা তাদের বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে এই স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের শুরু করে, যার ফলে তারা অনলাইনের মাধ্যমে খোঁজ খবর চালাই গোটা রাজ্যের কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাবে, কোন হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে ও রোগীদের চাহিদা মাফিক তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করে। তিনি আরও জানান, এখনও পর্যন্ত তারা তাদের এই সংগঠনের মধ্যে দিয়ে প্রায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে তার পরিষেবা দিতে পেরেছেন।
তবে এই তরুণ তুর্কীদের কাজ যে এখানেই থেমে তাও নয়। কিছু দিন আগেই বাংলার বুকে আরও একটি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ। বঙ্গপসাগরে সৃষ্টি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় উড়িষ্যা ও উড়িষ্যার উপকূলকে সম্পূর্ণ তছনছ করলেও তার প্রভাব পড়েছে বাংলাতেও। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দুই ২৪ পরগনা ও দুই মেদিনীপুরের শতাধিক গ্রাম, ভেঙেছে শতাধিক নদী ও সমুদ্র বাঁধ। ঘরছাড়া কয়েক হাজার মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়াতে ও তাদের হাতেও ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিতে উদ্যোগী হয়েছে এই তরুণ তুর্কিদের সংগঠন। সগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেবে এমন সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য করতে তারা ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে একটি ই-বুক প্রকাশ করার। যার বিক্রিত মূল্য সমস্তটাই তারা তুলে দেবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেবে এমন সংগঠনের হাতে।
তবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যুব সমাজ যখন লকডাউনের দোহাই দিয়ে মোবাইল গেমস ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে বাজে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে এবং একদল মানুষ যখন তাদেরকে 'উচ্ছন্নে যাওয়া প্রজন্ম' বলে অভিহিত করেছেন তখন এই কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের 'রিলিফ উইংস' সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে এক নতুন দৃষ্টান্ত গড়ে সমাজের বুকে এক নতুন ইতিহাস লিখছে তা বলাই বাহুল্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন