শুকনো ফুলের মালা

 সম্পাদকীয়

 


 

সৌমেন দাস,  দেবাশিস্ পাল; মাটির খবর: 'নেতাজী' নামটা শুনলে শরীরে শিহরণ জাগে না এমন ভারতীয়ের সংখ্যা সম্ভবত শূন্য। এবার সেই নেতাজী কে নিয়েই নাট্যকার উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের নতুন নাটক 'শুকনো ফুলের মালা।' আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য নিজের গলার মালা নিলামে চড়িয়েছিলেন নেতাজি,শিখ যুবক তার সর্বস্ব দিয়েও যখন নিলামে পরারাজিত হন অন্যতম চরিত্র ব্রিজলালের কাছে, তখন স্বয়ং নেতাজি হরগোবিন্দের ত্যাগকে মর্যাদা দিয়ে মালা তুলে দেন তার হাতে।নাটকের মূল কাহিনী নেতাজী বিষয়ক হলেও নাটকের মূল চরিত্র আসলে হরগোবিন্দ, আনোয়ার ও সুভদ্রা। এক ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিটের এই নাটক শুরু হয় ১৯৬৫ সালের ভারত পাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। যেখানে দেখানো হয় ভারতীয় সেনার কর্নেল হরগোবিন্দ সিং বসে আছে, ঠিক তখনই সেখানে প্রবেশ করে তাঁরই উর্দ্ধতন এক অফিসার এবং তাঁর উপর ভার আসে টানা ২২ দিন ধরে চলা যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে তাঁর দেশের যুদ্ধ বন্দি সৈনিকদের ফিরিয়ে আনতে এবং পাকিস্তানের সৈনিকদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কার্যত সেখানে তাঁকে জানানো হয়, পাকিস্তানের তরফে আসছে ওই দেশের সেনার কর্নেল আনোয়ার শেখ। আর সেই নাম শুনেই চমকে ওঠে হরগোবিন্দ এবং সেই চমকে ওঠার কারন জানতে চাইলে হরগোবিন্দ তাঁর অফিসারকে জানায় তাঁর ফেলে আসা INA এর দিনের কথা। নাটক প্রবেশ করে মূল পর্বে। হরগোবিন্দ জানাতে থাকে INA র দিন কেমন ছিল, কিভাবে সে একজন সফল ব্যবসায়ী থেকে নেতাজীর সেনা বাহিনীর একজন সফল সৈনিক হয়ে ওঠে। পাশাপাশি এই নাটকে দেশপ্রেমের মাঝেও দেখানো হয় হরগোবিন্দ ও সুভদ্রার প্রেম। কীভাবে সুভদ্রাকে পাওয়ার জন্য হরগোবিন্দ তাঁর ব্যবসার চির প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থাৎ ব্রিজলাল জয়সওয়ালকে তাঁর সর্বস্বটুকু দিতে চেয়েছিলেন তাও খুব সূক্ষ ভাবে এই নাটকে ফুটিয়ে তুলেছেন নাট্যকার।নাট্যকার এই নাটকের মধ্যেই দেখিয়েছেন, কিভাবে সুভদ্রা ও হরগোবিন্দের প্রেম দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মিলিয়ে যায়। এছাড়াও এই নাটকের মধ্যে দিয়ে সবচেয়ে বড়ো যে দৃশ্য দর্শকের নজর করেছে তা হরগোবিন্দের ধর্ম ত্যাগ। কথিত আছে, শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছ কেশ, কৃপান ও পাগড়ি এই তিনটি বস্তু অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা আনতে নেতাজীর এক কথায় সেই ধর্মকেই ত্যাগ করে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর বেশ নিলেন হরগোবিন্দ।
যদিও নাটকের শেষে ফিরে আসে আবার  যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। দুই দেশের সৈন্যদেরকে ফিরিয়ে দিতে গিয়ে পুনরায় মুখোমুখি হয় আনোয়ার ও হরগোবিন্দ এবং সেখানেই আনোয়ারের। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন আনোয়ার।



                মূলতঃ দেশভাগ করে স্বাধীনতা লাভ যেন হরগোবিন্দ-আনোয়ারের মতো দেশপ্রেমিকের কাছে এক বড়ো আঘাত। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করলেও পরিস্থিতি তাদের পৌঁছে দিয়েছে দুটি ভিন্ন স্বাধীন দেশে, আর তার ফলস্বরূপ তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যেন অস্ত্রধারণ করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের দুটি আলাদা আলাদা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে তা দেখে আনোয়ার-হরগোবিন্দের মানসিক যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ যেন সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মানসিক যন্ত্রণাকেই নাট্যকার সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন।


 

মন্তব্যসমূহ