কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে...'



সম্পাদকীয় প্রতিবেদন
চিত্রালঙ্করন সৌমেন দাস

দেবাশিস্ পাল, মাটির খবর:বাংলা তথা ভারতীয় সঙ্গীত জগতে একসঙ্গে এত নক্ষত্র পতন বোধহয় পূর্বে কখনো হয়েছে বলে মনে করতে পারবেন না কেউই।কয়েকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন ভারতের অন্যতম সুরসাধিকা লতা মঙ্গেশকর, আর এখন কিংবদন্তি গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যেন আরো এক কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী তথা সুরকার বাপি লাহিড়ীর হাত ধরে 'আমাদের ছুটি ছুটি' বলতে বলতে যেন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বঙ্গ জননী হারালেন তার একজোড়া বিশ্ব বিখ্যাত পুত্র-কন্যাকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বজ্রাঘাতের মতো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়াটা বাঙালি যখন মন থেকে মেনে নিতে পারছে না,ঠিক তখনই আরো এক দুঃসংবাদে যেন ভেঙে চৌচির হয়ে গেল বাঙালি হৃদয়, চলে গেলেন সর্বকালের সেরা সুরকার তথা সংগীতশিল্পী বঙ্গসন্তান বাপী লাহিড়ী। 
                       সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের 'শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি' বা 'এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে'র মত ভক্তিগীতি এখনো যেমন বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতার হৃদয়ে ভক্তিরস সঞ্চার করে তোলে। ঠিক তেমনি ভারতীয় সংগীতকে প্রথম প্রাশ্চাত্যের ছোঁয়া লাগিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রে পপ-ডিস্কো গানের জোয়ার আনতে পেরেছিলেন বাপী লাহিড়ী ।তবে শুধুমাত্র প্রাশ্চাত্য সংগীতের অনুকরণেই নয়, সব ধরনের সংগীতেই তিনি ছিলেন সমান সাবলীল তার প্রমাণ তিনি দিয়ে এসেছেন বছরের পর বছর ধরে।তাই বলা চলে সংগীতের একালের সঙ্গে সেকালের সেতুবন্ধন করতে পেরেছিলেন বাপীদা।বাবা-মা থেকে একাধিক নিকট আত্মীয় সংগীত জগতের খ্যাতনামা শিল্পী হওয়ার সুবাদে তাঁর অনুকূল পরিবেশে বড়ো হওয়াটা হয়তো সাফল্যের অন্যতম কারণ হতে পারে কিন্তু খুব অল্প বয়স থেকেই বাপী লাহিড়ী প্রতিভার পরিচয় দিয়ে আসছেন। মাত্র তিন বছর বয়সে  তবলা বাজিয়ে ,এগারো বছর বয়সে সুরারোপ করে রেকর্ড স্থাপন করেন তিনি। এহেন শিল্পীর কর্মজীবনের বড়ো অংশ বাংলার বাইরে আবর্তিত হলেও শিখড়ের টান কিন্তু কখনো ভোলেননি তিনি,আর তাইতো বাঙালির এত কাছের বাপীদা হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি।
                অন্যদিকে কিংবদন্তি শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের জাদুতে এখনো মোহিত হয়ে থাকে আপামর বাঙালি।'মধু মালতি ডাকে আয়' অথবা 'এ শুধু গানের দিন' বা 'এ পথ যদি না শেষ হয়' এই গানগুলোর মতো রোমান্টিক  গান বাঙালির কাছে চিরসবুজ হয়ে গেছে। এখনো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গান ব্যতিত সংগীতানুষ্ঠান বাঙালির কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।  'ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা' বা 'কি মিষ্টি দেখো মিষ্টি এ সকাল' গানগুলো যেন প্রকৃতি-পরিবেশকে আলাদাভাবে চিনিয়ে দেয় আমাদের,তাইতো যেন আমাদেরও গীতশ্রীর মতোই গাইতে ইচ্ছে করে,' কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে...'।  বাংলা তথা ভারতবর্ষের সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের কাছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যেমন দিদি বলেই পরিচিত ছিলেন, ঠিক তেমনই বাপি লাহিড়ীর পরিচিতি বাপীদা হিসেবে।তাই সামান্য সময়ের ব্যবধানে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় দাদা ও দিদির অমৃতলোকে যাত্রাটা যেন সংগীত তথা সংস্কৃতি জগতের অপূরণীয় ক্ষতি।


মন্তব্যসমূহ