প্রতিবাদী যুবককে পিটিয়ে খুন, এলাকায় শোকের ছায়া



অর্চিতা দত্ত; কাটোয়া; মাটির খবর: অবশেষে মৃত্যুর কাছেই হার মানলেন কাটোয়ার প্রতিবাদী যুবক। টানা পাঁচদিন ধরে বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লরলেও গতকাল সন্ধ্যেতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বছর তেত্রিশের ওই যুবক পার্থপ্রতিম ঘোষ। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনাকে ঘিরে এলাকা জুড়ে যেমন শোকের ছায়া নেমেছে, একই সঙ্গে দোষীদের কঠোরতম শাস্তির দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়াতে সরবও হয়েছে সাধারণ মানুষজন।
পরিবার সূত্রে খবর, কাটোয়া শহরের নন্দদুলাল রোডের বাসিন্দা পার্থপ্রতিম বাবু কাটোয়া পৌরসভার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরিবারে দুই ভায়ের মধ্যে ছোটো ভাই ছিলেন পার্থপ্রতিম বাবু। এছাড়াও পরিবারে রয়েছে মা, বাবা দুই  সন্তান ও স্ত্রী। 

 

 



প্রতি বছরের মতো এবছরও তাদের বাড়িতে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছিলেন পার্থপ্রতিম বাবু। সেই মতো রাতের বেলায় পূজো মণ্ডপের বাইরে দুই বন্ধুকে নিয়ে গল্প গুজব করছিলেন তিনি। কার্যত সেই সময়ই কাটোয়া শহরের একদল মদ্যপ যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে, লোকজনের বাড়ি ভাঙচুর করতে শুরু করে। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলে কার্যত সেই ঘটনা পার্থপ্রতিম বাবু মেনে নিতে না পারলে ওই যুবকদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁর উপর চড়াও হয় ওই মদ্যপ যুবকের দল। লাঠি সোঁটা নিয়ে মারধরও করে তারা। যদিও পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বন্ধু তাঁকে আটকাতে গেলেও কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ওই মদ্যপ যুবকের দল পাশের মন্ডপ মন্ডপ সজ্জার জন্য ব্যবহৃত সিমেন্টের তৈরি ফুলের টব তুলে নিয়ে এসে সজোরে আঘাত করে পার্থপ্রতিম বাবুর মাথায়, কার্যত তার পরেই তার মাথা থেকে রক্তপাত শুরু হয় এবং তিনি সংজ্ঞা হারান এবং তাঁকে মৃত ভেবে ওই এলাকা থেকে চম্পট দেই ওই মদ্যপ যুবকের দল। ঘটনার পরেই গুরুতর আহত অবস্থায় পার্থপ্রতিমকে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁর বন্ধুরা, পরে সেখান থেকেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও  সব শেষে বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শুরু হয় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। গত বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমানের ওই বেসরকারি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে পার্থপ্রতিম ঘোষ।
পরিবার সূত্রে আরও খবর, ঘটনার পরেই ১২জন যুবকের নামে কাটোয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পার্থপ্রতিম বাবুর বন্ধু তথা ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্ষি অপরূপ চট্টোপাধ্যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পার্থপ্রতিম ক্রিকেট খেলায়  সুখ্যাতি ছিল। পাশাপাশি পরোপকারী স্বভাবও ছিল। এর আগেও বহুবার বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তবে তার ফল এতো ভয়ংকর হয়নি।
ঘটনা সম্পর্কে কাটোয়া থানার পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করে তাঁরা, এবং দুই দফায় ১২ জনকে গ্রেফতার করে কাটোয়া আদালতে তোলা হলে  ধৃত ছট্টু চন্দ্র, হলু পণ্ডিত, সোমনাথ থান্ডার সহ প্রত্যেকেরই পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর হয়।

মন্তব্যসমূহ