কাঞ্চন শূন্য নিতাই চাঁদের দেশ......


সম্পাদকীয় প্রতিবেদন


দেবাশিস্ পালমাটির খবর: বাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে নানুরের সুন্দরপুর গ্রাম,এর দিনকয়েক পরেই কীর্ণাহারে এক অনুষ্ঠানে এসে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে বসলেন ,'সুন্দরপুরের লোক ঘরবাড়ি হারিয়ে বাঁধে বাস করছে,আর এখানে নাচা গানা হচ্ছে?' না!সেকথা শুনে কেউ রাগ করেননি,বরং কিঞ্চিৎ লজ্জিতই হয়েছিলেন উপস্থিত সকলে। এমনটাই ছিলেন কাঞ্চন সরকার,অপ্রিয় হলেও সত্য কথা বলতে,মনের কথা মুখে আনতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতেন না।মুখোশহীন মুখের অধিকারী হয়ে সমগ্র জেলা ঘুরে ঘুরে 'শিরদাঁড়া সোজা রাখার' পাঠ দেওয়ার সাহস রাখতেন তিনি। চিরকুমার কাঞ্চন সরকার গর্বভরে বলতেন 'নিতাই চাঁদের দেশের লোক আমি...।' প্রকৃত অর্থেই নিত্যানন্দ অবধূতের জন্মভূমিতে তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নয়াপ্রজন্ম,সবুজের অভিযান থেকে বসুন্ধরা একের পর এক মাইলস্টোন একরকম একক প্রচেষ্টায় করতে পারাটা, বোধহয় কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।আর তাই কাঞ্চন সরকার ছিলেন অসাধারণ! সামাজিক কাজে, মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে দু'বার ভাবতেন না, জেলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে বেড়াতেন,রাঙামাটির শিক্ষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের শিখড়ের সন্ধানে। এহেন মানুষটির বীরভূম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান সর্বত্র অবাধ বিচরণ আপনা হতেই সমীহ আদায় করে নিতে পেরেছে অবলীলায়। যেকোনো অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্য মন্ত্র মুগ্ধ করে রাখতে পারতো দর্শকদের। এহেন মানুষটির চলে যাওয়াটা জেলার অপূরণীয় ক্ষতি তো বটেই, তবে সব থেকে বড় ক্ষতি বোধহয় সংবাদ-সংস্কৃতি-সাহিত্য জগতের, কারণ শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলার পাঠ দেওয়ার মানুষের যে বড়ো অভাব,প্রকৃত সমাজসেবার রাস্তা দেখানোর মানুষেরও বড়ো অভাব। জীবনের শেষ দিনেও দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে নিয়ে অন্য শহরে ছুটে যাওয়া আর সেখানেই চিরঘুমের দেশে চলে যাওয়ার মধ্য দিয়েও যেন তিনি মানুষের পাশে থাকার বার্তাই দিয়ে গেলেন।আর নজির সৃষ্টি করে গেলেন বীরভূমের একমাত্র হোমিওপ্যাথি কলেজকে নশ্বর দেহ দান করে গিয়ে। সৃজনশীল এই মানুষটি সারাজীবন ধরে সৃষ্টি করে গেলেন আপন খেয়ালে,এখন তাঁর সৃষ্টিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় টিকিয়ে রাখতে পারলেই কাঞ্চন সরকারের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।সিউড়ি তথা সমগ্র জেলাবাসী সেই দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে পারবে বলেই আশা রাখি।

মন্তব্যসমূহ