সেঁজুতি ব্রত-বাংলায় টিকে থাকা অন্যতম কুমারী ব্রত
সম্পাদকীয় প্রতিবেদন
দেবাশিস পাল, মাটির খবর: বাংলার অসংখ্য কুমারী ব্রতের মধ্যে, কয়েকটি মাত্র ব্রত, আজও বিভিন্ন স্থানে কোন রকমে টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সেঁজুতি ব্রত ।মূলত ছয় থেকে এগারো বছর বয়সী কুমারী মেয়েরা এই ব্রত পালন করে থাকে পিতৃকুল ও শ্বশুরকূলের মঙ্গল কামনার জন্য। ব্রত পালনের জন্য সমস্ত ব্যাপারটা গাইড করেন বয়স্কা কোনো মহিলা,এর জন্য কোন পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না।বাড়ির উঠানে হরি মণ্ডপের সামনে মুঠ-সংক্রান্তির দিন সন্ধ্যা বেলা থেকে শুরু করে,এক সময় প্রতিদিনই পালন করা হতো, শেষ হত ইতু-সংক্রান্তির দিনে।পরে শুরু হয় প্রতি রবিবার পালন করা।তবে এখন আবার আরও ছোট করে দুই সংক্রান্তি ও নবান্নের দিন এই তিনটি দিন ব্রত পালন করা হচ্ছে।
কলসি, চাল গুঁড়ো,দূর্বা,জলঘট,প্রদীপ প্রভৃতি নিয়ে- শিব মূর্তি, গাছ, বাসগৃহ, গহনা,ইত্যাদির প্রতীক হিসেবে বাহান্ন ধরনের রেখাচিত্র অঙ্কন করতে হয়। প্রথমে প্রদীপ জ্বালিয়ে বলা হয়--
এইভাবে তিন বছর পর চতুর্থ বছরে উদযাপন বা ব্রত শেষ করা হয়,যাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় 'উজিয়ে দেওয়া'। শেষের বছরে তিনজন ব্রাহ্মণকে কাপড়, চাদর ইত্যাদি সহ দক্ষিণা দান করতে হয়,ঐবছরে ভাই ছাতা ধরে, ব্রতপালন-কারিনী মুড়ির নাড়ু ছাতার উপরে বর্ষণ করে।এইভাবে মঙ্গল কামনা করা হয় ভাইয়েরও।
হয়তো সংসার পরিজনদের মঙ্গল কামনার্থে শুরু হয়েছিল বটে,তবে একসময় সেঁজুতি ব্রতের মতো অনুষ্ঠানের জন্য বছর ভর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো বাংলার কিশোরী কন্যারা, সমগ্র পাড়া যেন মেতে উঠতো এই ব্রত ঘিরে।বর্তমান প্রজন্মের কুমারী মেয়েদের মধ্যে অবশ্য সেঁজুতি ব্রতের মতো আচার অনুষ্ঠান পালনের প্রবণতা ধীরে ধীরে কমছে,আর এর জন্য কিছুটা দায়ী আমরাও।হয়তো আমরা আধুনিক হতে গিয়ে বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠানকে সঠিকভাবে বহন করতে পারছি না,যার ফলস্বরূপ বর্তমান প্রজন্মের কাছেও যেন ক্রমশ গ্রহণযোগ্যতা হারাতে বসেছে লৌকিক আচার-ব্রত-অনুষ্ঠান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন