সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট টু প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ

 

সম্পাদকীয় প্রতিবেদন

জেনারেল বিপিন রাওয়াত।(ফাইল চিত্র)

 সৌমেন দাস, মাটির খবর: সাল ১৯৭৮, ভারতীয় সেনার ১১ গোর্খা রাইফেলস এর ৫ম বাটালিয়নে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট এর কমিশন নিয়ে ভর্তি হল বছর ২০র এক তরুণ। বাবাও ওই একই রেজিমেন্টের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক হওয়ার সুবাদে দেশ ভক্তি, অধ্যাবসাই সেই ছোট থেকেই। তবে এবার তার প্রমাণ দেওয়ার সময়। তিলে তিলে সেই নিজেই সে নিজেকে প্রমাণ করতে শুরু করলো। একের পর এক ভয়ংকর সেনা অপারেশনের অংশীদার হলো ছেলেটি। সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকলো পদন্নোতি। আর সেই পদন্নতিই একদিন ছেলেটিকে একজন সাধারন সেনা কর্মী থেকে  করে দিলো ভারতীয় স্থল বাহিনীর ২৬ তম সেনা প্রধান তথা প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। আর সেদিনের সেই তরুণের নাম বিপিন লক্ষ্মণ সিং রাওয়াত বা বিপিন রাওয়াত। 

১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই মার্চ উত্তরাখণ্ডের গারওয়াল জেলার পাউড়ি শহরের একটি হিন্দু গাড়ওয়ালি রাজপুত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন বিপিন। বাবা লক্ষ্মণ সিং রাওয়াত ছিলেন ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল। 

সস্ত্রীক বিপিন রাওয়াত।(ফাইল চিত্র)

দেরাদুনের কেমব্রিয়ান হল স্কুল থেকে প্রথম স্কুল জীবন শুরু হয় বিপিনের, তার পর একে একে শিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুল, খাদখশলার NDA একাডেমি ও দেরাদুনের IMA একাডেমির মধ্যে দিয়ে প্রাথমিক ভাবে শিক্ষা জীবন শেষ করে ভারতীয় সেনা  বাহিনী যোগদান করে বিপিন। সেখানেই একের পর এক দুর্ধর্ষ সেনা অপারেশনের অংশীদার হন বিপিন, এছাড়াও নিখুঁত ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া ও দলকে পরিচালনা করার বিশেষ গুণ ও উপস্থিত ছিল বিপিনের মধ্যে, আর সেই গুণেরই ফসল ছিল বেশ  ১৯৮৭ সালের সিনো ইন্ডিয়ান স্কিরমিশ, কঙ্গোর ইউএন মিশন, ২০১৫ সালের মায়ানমার স্ট্রাইক প্রভৃতি। আর এই গুণই বিপিনকে তাঁর দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সেনা জীবনে একজন সাধারন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল অনায়াসেই। ঝুলিতে এনে দিয়েছিল পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল, উত্তম সেবা মেডেল, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেলের মতো আঠারোটি সেনা পদক। কিন্তু ২০২১ সালের ৮ই ডিসেম্বরে যেন সব কিছুই স্তব্ধ করে দিল তাঁর। ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ ১৭ কপ্টারে তামিলনাড়ুর সূলুর থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে নীলগিরি জেলার কুন্নুরের একটি পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ করে কপ্টার ভেঙে অগ্নিসংযোগ হয়ে গেলে গুরুতর আহত হন CDS বিপিন রাওয়াত ও তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত সহ আরও ১২ জন সেনাকর্মী। পরে তাঁদেরকে উদ্ধার করে ওয়েলিংটন এয়ারবেসে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন ভারতের এই বীর সন্তান। যে ঘটনার পরে কার্যত শোকের ছায়া দেশ জুড়ে। ছুটি হীন দীর্ঘ চল্লিশ বছরের কর্ম জীবনে জেনারেল বিপিন রাওয়াত যে ভাবে দেশের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন, এবং ভারতীয় সেনাকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তা চির স্মরণীয় এবং কর্ম জীবনের মধ্যেই তাঁর এই আকস্মিক চলে যাওয়ার পরে যে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হলো তা পূরণ করাই যেন এখন চ্যালেঞ্জ ভারত বাসীর কাছে


মন্তব্যসমূহ