মুঠ সংক্রান্তিতেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় বাংলা জুড়ে


সম্পাদকীয় প্রতিবেদন


মাঠে থেকে মুঠো ধান নিয়ে যাওয়ার চিত্র। (নিজস্ব চিত্র)

 দেবাশিস্ পাল, মাটির খবরঃ অগ্রহায়ণ মাস পড়লেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় বাংলার গ্রামে গ্রামে।কারণ কৃষিপ্রধান বঙ্গদেশের অন্যতম উৎসব নবান্নের সময় এটা। যদিও কৃষিকেন্দ্রিক এই উৎসবের সূচনাটা হয়ে যায় কার্তিক মাসের শেষ দিনে‌ই,তবে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহটা যেন আপৎকালীন পরিস্থিতির মতো।মাঠ থেকে ধান এনে ঝারাই করে তা সিদ্ধ করা পেশাই করে চাল বের করে তা ঠিক ঠাক রেখে দেওয়া, পুরোটাই করতে হয় নিয়ম মেনে অত্যন্ত শুচিতার সঙ্গে। নবান্ন যে শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয় ক্ষেতের প্রথম ধানের তৈরি খাদ্যদ্রব্য উৎসর্গ করা হবে দেব-দেবী, প্রকৃতি, পূর্বপুরুষদের।তাদের দেওয়ার পর কৃষক পরিবার আত্মীয়স্বজন নিয়ে নতুন ধানের নবান্ন নিজেরা গ্রহণ করবে।সামনে যে অনেক কাজ ক্ষেতের সমস্ত শস্য নিয়ে এসে গোলাভর্তি করতে হবে,তার জন্য অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হবে,আর তার জন্যই দেবদেবীদের কাছে, পূর্বপুরুষদের কাছে আর্শীবাদ প্রার্থণা করার‌ও উৎসব এটা।একসময় নবান্ন পালিত হতো অত্যন্ত আড়ম্বরের সঙ্গে,নিষ্ঠার সঙ্গে। নবান্ন ছিল মানুষের সবচেয়ে বড়ো অসাম্প্রদায়িক উৎসব। সময়ের তালে তাল মেলাতে গিয়ে  ঐতিহ্যবাহী এই নবান্ন উৎসব আজ কিছুটা ম্রিয়মাণ হলেও বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ সহ একাধিক জেলায় উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হয় এই উৎসব, মানুষজন মেতে ওঠে কবি,বাউল যাত্রা সহ বিভিন্ন লোকংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠানে।তবে এই উৎসবে  অন্নপূর্ণা, কার্তিক প্রভৃতি দেবদেবীর আরাধনা করতেও দেখা যায় গ্রামবাংলায়, রীতিমতো মুর্তি প্রতিষ্ঠা করে দুদিনের এই পুজো হয়ে থাকে বিভিন্ন স্থানে। সবমিলিয়ে নবান্ন উৎসব যেন একসাথে মেতে ওঠার উৎসব যেখানে পুজোপাঠ থেকে পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করা, লোকসংস্কৃতি থেকে খেলাধুলা  কিছুই বাদ যায় না। তাই এই ধরনের উৎসবের  কিছুটা বিবর্তন ঘটলেও যুগ যুগ ধরে যে টিকে থাকবে সেব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী সকল বাঙালি।

মন্তব্যসমূহ