"অনৈতিক" ভাবে সাসপেনশন বাড়ানো হলো বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের। 'কেউ যদি আত্মহনন করে তবে তার দায় উপাচার্যের' হুঁশিয়ারি পড়ুয়াদের

সৌমেন দাস; মাটির খবর: "বিশ্বভারতী" না "বিতর্ক ভারতী" ? এ যেন এক কঠিন দ্বন্দ্ব। দিন কয়েক আগে চলছিল বিশ্বভারতীর কর্মীদের বেতন না দেওয়া ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা নিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। সেই বিতর্কের রেশ কিছুটা কাটতে না কাটতেই আবার এসে হাজির হলো "অনৈতিক" ভাবে ছাত্র ছাত্রীদের সাসপেনশন বৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক। 
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ  বিশ্বভারতীর অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের দুই ছাত্র ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সৌ এর সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্রী রূপা চক্রবর্তীর উপর চুরির চেষ্টা করার অভিযোগ আনে এবং তাদেরকে তিন মাসের জন্য অর্থাৎ ১৪ই মার্চ পর্যন্ত সাসপেন্ড করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই মেয়াদ শেষ হতে না হতেই পুনরায় তাদেরকে তিন মাসের জন্য অর্থাৎ ১৪ই জুলাই পর্যন্ত সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পরে অবশ্য সেই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময় বিশ্বভারতী চত্বরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা, তবে তাতে লাভ অবশ্য কিছুই হয় নি উল্টে ফের মেয়াদ বেড়ে গেল ওই তিন পড়ুয়ার সাসপেনশনের। গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্বভারতীর প্রোক্টর ওই তিন পড়ুয়াকে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেন, কমপিটেন্ট অথরিটির (উপাচার্য) নির্দেশে তাদের সাসপেনসনের মেয়াদ আরও তিন মাস অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। 
কার্যত এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। শাস্তির মুখে পড়া ছাত্র সোমনাথ সৌ জানান, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাদেরকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে সাসপেন্ড করেছেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাদের উপর যে অভিযোগ আনছে সেই অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যে যার দরুন এখনো পর্যন্ত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনো রকম তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারেনি। তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো তদন্ত হলে অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হবে। কিন্তু উপাচার্য চাইছেন তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে, কার্যত তার ফলেই বার বার তাদের সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এবং যা এই নিয়ে তৃতীয়বার এবং ন'মাসে পড়লো। তিনি আরও বলেন এই সাসপেনশন যদি চলতে থাকে তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে এবং তার ফলে যদি কেউ ভুল পথে পরিচালিত হয়ে ভুল কোনো কাজ করেন তবে সে ক্ষেত্রে কিন্তু দায়ি থাকবেন উপাচার্য স্বয়ং। 
তিনি আরও যোগ করেন, সম্প্রতি উপাচার্য তাদের সহপাঠী দেরকে অনায়াসে 'মাওবাদী' তকমা দিয়েছেন। যে ঘটনাও স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাব ফেলেছে ছাত্র মনে।
শাস্তির মুখে পড়া অন্য ছাত্র ফাল্গুনী পান জানান, তাঁরা ছাত্র আন্দলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এবং উপাচার্যের একের পর এক অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সামনে থেকে প্রতিবাদ করেছেন কার্যত সেই আক্রোশ থেকেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাদের উপর উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে সাসপেনশন জারি করেছিলেন এবং বর্তমানে তার মেয়াদ বাড়িয়ে তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তবে এই ভাবে দীর্ঘদিন চলতে চলতে যদি কোনোদিন কোনো পড়ুয়া ভুল সিদ্ধান্ত নেন বা আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেন, তবে দায়ভার কিন্তু উপাচার্যকেই নিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। 
তবে এত কিছুর পরেও টনক নড়েনি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। এই ঘটনার বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের তরফে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

মন্তব্যসমূহ