প্যান্ডেমিক অতিক্রম করার মুহূর্তে শিল্পী জীবন যন্ত্রণা ফুটে উঠলো ‘প্যান্ডেমিক’ এর মধ্যে দিয়ে।

সৌমেন দাস; সিউড়িঃ আমরা সদ্য পার করে এলাম ২০২০ সাল, বলা চলে অভিশপ্ত ২০২০ সাল। করোনা মহামারী, লকডাউন, আইসোলেশন, ওয়ার্ক ফ্রম হোম এর মতো একাধিক নতুন শব্দের সংযোজন যেন এই একটা বছর থমকে দিয়েছিল গোটা বিশ্বের প্রগতির চাকা। বন্ধ হয়েছিল সমস্ত কর্মক্ষেত্র। আর এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় প্রতিটা মানুষই তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শিল্প ও শিল্পী জগ

তবে নতুন বছরের শুরুতে যেন আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে শিল্পী জগৎ, দীর্ঘ লকডাউন পর্ব কাটিয়ে নির্দিষ্ট সমাজ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুনরায় মঞ্চে ফিরছেন শিল্পীরা। সেই সুযোগে বীরভূম জেলার অন্যতম প্রাচীন নাট্যদল ‘থিয়েটার অভিযান নাট্য গ্রুপ’ তাদের দলের ৫৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সিউড়ির জোনাকি রঙ্গমঞ্চে আয়োজন করেছিল ৫ দিন ব্যাপি বীরভূম জেলা মহানাট্যৎসবের, উক্ত অনুষ্ঠানের চতুর্থতম দিনে সিউড়ির জোনাকি রঙ্গমঞ্চ থেকেই বীরভূম জেলার বিভিন্ন নাট্যদল গুলির অন্যতম দল আহমদপুর নাট্যতীর্থ সফল ভাবে প্রথম মঞ্চস্থ করলো তাদের নতুন নাটক  ‘প্যান্ডেমিক।’ ২০ মিনিটের এই নাটকের মধ্যে দিয়ে সদ্য পেরিয়ে করোনা আবহে থিয়েটার শিল্প ও থিয়েটার শিল্পীদের যে দুর্দশাগ্রস্ত জীবন সেই কাহিনিই তুলে ধরেছেন নাট্যকার সন্দীপন দত্ত। অভিনয় করেছেন ৮ জন শিল্পী। নাটকের মূল ভাবনা নিয়ে সন্দীপন বাবু জানান, নাটকটি মূলত লকডাউন পরিস্থিতিতে নাট্য শিল্পীদের যে দুর্দশা সেই কথা মাথায় রেখেই লেখা। নাটকের মুখ্য চরিত্র অনুভব, সে একজন নাট্য কর্মী। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, কিন্তু তার ভালোবাসা বলতে গেলে থিয়েটার। বাড়িতে মা নেই, সদস্য বলতে অসুস্থ বাবা, কলেজ পড়ুয়া বোন এবং সে নিজে। তাদের এই তিনজনের পরিবারে রোজগেরে বলতে একমাত্র অনুভব নিজেই, বাড়িতে অভাব আছে, কিন্তু তবুও সে কোন চাকরির খোঁজ না করে নিজেকে পরিচিতি দিয়েছে পেশাদার নাট্যকার হিসেবে। সে বিভিন্ন দলে নাটক করে যে অর্থ উপার্জন করত তা দিয়েই মূলত তার বাবার ওষুধ পত্র, বোনের পড়াশুনা থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় খরচ খরচা চলতো, কিন্তু তার মাঝেই এসে উপস্থিত হয় করোনা মহামারী। এক ধাক্কায় বন্ধ হয়ে যায় অনুভবের সমস্ত শো বন্ধ হয়ে যায় উপার্জন। সংসারের অভাব যেন ক্রমশ চাগার দিয়ে ওঠে, প্রথম দিকে তার জমানো টাকা পয়সা দিয়ে কোন রকমে সংসার চললেও এক সময় তাও শেষ হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক ভাবে জীবনের খেই হারিয়ে ফেলতে শুরু করে অনুভব। মাঝে মধ্যে তার বন্ধু দীপক, কৌশিক রা আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে চাইলে তার আত্মসম্মানের দায়ে সেসব ফিরিয়ে দেয় এবং ধীরে ধীরে অবসাদে ভুগতে থাকে ও একটা সময় বাড়িতে অসুস্থ বাবা ও যুবতি বোনকে রেখে দিয়েই চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।


চলছে নাটকের অভিনয়। (নিজস্ব চিত্র)

বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া,  থিয়েটার প্রেমী দাদার মৃত্যুর পরে বোন কিঙ্কিনির কাছে থিয়েটার যেন ঘৃণার বস্তু। তবে বাবা সত্যবানের কাছে থিয়েটার তখনও আশার আলো জ্বালায়। নাটকের শেষ দৃশ্যে অনুভবের বাবা সত্যবান বাবুর সংলাপে শোনা যায় ‘থিয়েটার কখনও হারতে শেখাই না। থিয়েটার চিরকাল মানুষকে লড়তে শেখায়, বাঁচতে শেখায়’। তার পরেই শেষ হয় নাটক 'প্যান্ডেমিক'।

সমগ্র নাটকটিতে ৮ জনের বিভিন্ন চরিত্রে সুদক্ষ অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুকান্ত দাসের অনুভব নামক চরিত্র, অনুভবের বাবার চরিত্রে অভিনয় করা বৃন্ত বিকাশ কুণ্ডু ও ঈশিতা চিত্রকরের কিঙ্কিনির চরিত্রে সুচারু অভিনয় দর্শকদের মনে  আলাদায় জাইগা করে নিয়েছে। এছাড়াও আলোক সজ্জায় আশিস্ চিত্রকর ও অসিত প্রামানিক, রূপসজ্জায় সীতেন্দু শেখর দাস ও মঞ্চ সজ্জায় কুশল সেনের শৈল্পিক ছোঁয়া সমগ্র নাটকটিকে দর্শককূলে আরও মনোগ্রাহী করে তুলেছে।   

মন্তব্যসমূহ